খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইনজীবী আলিফ হত্যা : ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৩ জন, গ্রেপ্তার ৭

আইনজীবী আলিফ হত্যা : ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৩ জন, গ্রেপ্তার ৭

গেজেট ডেস্ক

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে ১৩ জন শনাক্ত হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পরে তাদের মধ্য থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলো– রুমিত দাস, সুমিত দাস, নয়ন দাস, গগন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস ও সনু মেথর।

ফুটেজে শনাক্ত অন্যরা হলো– বিকাশ দাস (১), অর্জুন দাস, বিকাশ দাস (২), বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্র শুভ কান্তি দাস, সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের কর্মচারী কৃষ্ণ দাস ও বুনজা মেথর। তাদের মধ্যে বিকাশ দাস (১) ও বুনজা মেথরকে হত্যাকাণ্ডের হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশের বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা। বিকাশ বান্ডেল সেবক কলোনির হরিজন সম্প্রদায়ের সর্দার জগন্নাথ দাসের ছেলে। এ ঘটনায় বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুভ কান্তি দাসকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সিলভার রঙের হেলমেট, কমলা রঙের টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা রামদা হাতে এক যুবক এবং লাল হেলমেট, নীল রঙের টি-শার্ট ও জিন্স পরা বঁটি হাতে আরেক যুবক আইনজীবী আলিফকে কোপাচ্ছে। পুলিশ বলছে, প্রথমজন বিকাশ দাস; দ্বিতীয় ব্যক্তি বুনজা মেথর। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, বিকাশ ও বুনজাকে ধারালো অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। জগন্নাথের তিন ছেলেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। মহসিন কলেজের কর্মচারী কৃষ্ণও ঘটনাস্থলে ছিল। তবে বান্ডেল হরিজন সমাজ যুবকল্যাণ সংঘের সভাপতি জগন্নাথ দাস ঝর্ণা বলেছেন, ‘আমার ছেলেরা এবং সেবক কলোনির কেউ আইনজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে, তারা সেখানে কী ঘটেছে তা উৎসুক জনতা হিসেবে দেখতে গিয়েছিলেন।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার রইছ উদ্দিন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের হত্যা মামলায় আসামি করা হবে। জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ চলছে।’

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত সোমবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়ের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে আইনজীবী আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করে চিন্ময়ের অনুসারীরা। তবে গতকাল রাত পর্যন্ত আলিফ হত্যায় কোনো মামলা হয়নি।

চট্টগ্রাম আদালত ভবন থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারের দূরত্ব মাত্র ৬০০ মিটার। পাহাড় চূড়ার আদালত ভবনে যেতে ও আসতে দুটি পথ রয়েছে। চারদিকে পাহাড়ঘেরা আদালত ভবনে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ঘাটতির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুষছে রাজনৈতিক দল ও স্থানীয়রা। আদালতের সংরক্ষিত এলাকায় কীভাবে চিন্ময় দাসের এত অনুসারী জড়ো হলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে গতকাল নগর পুলিশের দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) লিয়াকত আলীকে পিওএম শাখায় বদলি করা হয়েছে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বন্দর বিভাগের উপকমিশনার শাকিলা সোলতানা।

নিরাপত্তায় ঘাটতি প্রসঙ্গে সিএমপি মুখপাত্র বলেন, আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় কোনো ঘাটতি ছিল না। কাগজে-কলমে ৩৫০ সদস্য ছাড়াও বাড়তি ফোর্স মোতায়েন এবং তল্লাশি চৌকি ছিল। আদালতের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনার, রেজিস্ট্রি ভবনসহ নানা কার্যালয় রয়েছে। বিচারপ্রার্থী লোকজন যাতে হয়রানির শিকার না হন, তা বিবেচনায় রাখতে হয়েছে। রুটিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লিয়াকত আলীকে বদলি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পুলিশের তিন মামলায় গ্রেপ্তার ২৭

চিন্ময় দাসকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে তিন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাগুলো হয়েছে। এতে ৭৬ জনের নামে এবং অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ২৭ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

যেভাবে আলিফ হত্যা

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নগরের কোতোয়ালি থানার রঙ্গম কনভেনশন হলের পাশ দিয়ে চলে গেছে এসি দত্ত লেন, যেটি বান্ডেল রোডের সঙ্গে যুক্ত। এ লেনের ‘নিলয় স্বজন’ নামের ভবনের পাশে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালতে কর্মরত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আলিফ খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। চিন্ময়ের অনুসারীদের ধাওয়ায় অন্যরা দৌড়ে চলে আসতে পারলেও, পা মচকে পড়ে যান আলিফ। এ সময় সেবক কলোনি থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসা লোকজন তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে আইনজীবীরা উদ্ধার করে তাঁকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিলয় স্বজন ভবনের এক বাসিন্দা বলেন, ধাওয়া খেয়ে সেবক কলোনি থেকে এক দল দুর্বৃত্ত রামদা-বঁটি নিয়ে এসে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষকে ধাওয়া দেয়। এ সময় একজন পড়ে গেলে নিলয় স্বজন ভবনের পাশে সাদা লোহার গেটের সামনে তাঁকে কোপানো হয়।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!